নিজের ব্যক্তি ও শিল্পী জীবন নিয়ে অন্যদের মতো সুমাইয়া শিমুও ভাবেন মাঝে মাঝে। ব্যাক্তি ও অভিনেত্রী সুমাইয়া শিমুর মূল্যায়ন কিভাবে করবেন এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অভিনয়শিল্পী সুমাইয়া শিমু অসম্ভব পরিশ্রমী, সিনসিয়ার, কমিটেড, কাজ ছাড়া কিছুই বোঝেনা সে। মানের সথে কখনো আপোস করে না। সব সময় ভাল কাজ নিয়ে ভাবে। আর ব্যক্তি সুমাইয়া শিমু খুবই অলস। একটু সিম্পল। তাকে টিভিতে ফিটফাট দেখা গেলেও বাস্তবে ব্যতিক্রম। অনেক বেশী জেদী মেয়ে। এতটা জেদ না থাকলেও হতো।
সুমাইয়া শিমুর আজকের যে অবস্হান, এখানে আসতে তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। হুট করে কেউ কেউ সাফল্যটাকে মালা করে গলে পরতে পারলেও সুমাইয়া শিমুকে সফলতার পথে হাঁটার জন্য সেই পথটাকে মসৃণ করতে হয় যোগ্যতার প্রলেপ দিয়ে। নিজেকে জনপ্রিয় করে তুলতে যে সংগ্রাম সুমাইয়া শিমুকে করতে হয়েছে, সেই সংগ্রামের গল্প নিয়ে তিনি বললেন, আমি অভিনয়শিল্পী হিসেবে আজ যে অবস্হানে রয়েছি, তার জন্য আমাকে জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়েছিল। হুট করেই আমার জীবনে কিছু আসেনি। অনেকে যেমন লাকি থাকে, লটারির ভাগ্য থাকে না অনেকের, আমার এ ধরনের ভাগ্য একদমই নেই। আমি লাকি মানুষ নই। যেকোনো জিনিস প্রাপ্তির জন্য আমার অনেক সময় লাগে। আমি মাঝে মাঝেই আমার পেছনের সময়টাতে ফিরে যাই স্মৃতির ভেলায় ভেসে। আমি যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, সেসময় পড়াশোনার পাশাপাশি আমি ইউনিট্রেন্ড-এ পার্টটাইম জব করতাম। একদিকে পড়াশোনা অন্যদিকে জব। এরইমধ্যে আবার নাটকে অভিনয় শুরু করি। তো যেদিন বিকালে শুটিং পড়তো, সেটা আমি বেশ উপভোগ করতাম। কোনোদিন যদি সকালে শুটিং পড়তো, তাহলেই ঘাপলা লেগে যেতো। কারণ বিশ্বদ্যিলয়ে আমার ক্লাসগুলো ছিলো সকালে। ঐ সময় আমার গাড়ি ছিল না বলে সকাল ৯টায়ই আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হতো। আমি সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসেই আসা-যাওয়া করতাম। ক্লাস শেষ হওয়ার পর অন্যরা যখন সহপাঠীদের সাথে নানারকম গল্পের আসরে মজে যেত, আমি তখন এক দৌড়ে বাসে উঠে যেতাম। অফিসের কাজ শেষে আবার শুটিংয়ে অংশ নিতাম। এভাবে একের পর এক কাজ করতে করতেই আমি আজকের সুমাইয়া শিমু রুপে নিজেকে নির্মাণ করেছি।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সিনিয়র শিল্পীদের শিডিউল অনুযায়ী সুমাইয়া শিমুকে শুটিং শিডিউল দিতেন নির্মাতারা। সময়ের বিবর্তনে এখন সুমাইয়া শিমুর শিডিউলের সাথে মিলিয়ে নির্মাতারা অন্যদের শিডিউল দেন। অভিনয় ক্যারিয়ারকে আরো উজ্জল জায়গায় এনে সুমাইয়া শিমু এখন নিজের সাথে নিজেই প্রতিযোগিতা করেন। তিনি একটি নাটকে অভিনয়ের পর সেই পারফর্মেন্সকে ছড়িয়ে যেতে পরবর্তী নাটকে নিজেকে তৈরী করেন অনেক সচেতনতার সঙ্গে। সুমাইয়া শিমু বলেন, আমি প্রতিনিয়তই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এজন্য আমি এখন সব নাটকেই কাজ করি না। আমার কাছে অনেক নির্মাতার স্ক্রিপ্ট আসে। যে নাটকের চরিত্রে আমি দর্শকদের নতুন কিছু দেবার সুযোগ খুজেঁ পাই অভিনয়ের যথেষ্ট সুযোগ থাকে যে নাটকে, আমি এখন শুধু সে নাটকগুলোতেই কাজ করছি। আমি মনে করি, দশটা মোটামুটি মানের নাটকে অভিনয়ের চেয়ে দুটো খুব মানসম্পন্ন নাটকে কাজ করা বেশি ভাল। যার ফলে আমি একই ধরনের নাটক ও চরিত্রে কাজ করতে তেমন উৎসাহ পাই না।
সুমাইয়া শিমু তার অসাধারণ অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মনের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নিয়েছেন অনেক আগেই। তার অভিনীত নাটক দর্শকদের মুগ্ধ করলেও এখনো সুমাইয়া শিমু অভিনয় করে তৃপ্তি খুঁজে পাননি। সুমাইয়া শিমু বলেন, এ পর্যন্তা আমি কোনো নাটকে কাজ করে তৃপ্ত হতে পারিনি। আমার অভিনীত অনেক নাটক দর্শকদের ভাল লেগেছে। একেক নাটক একক শ্রেণীর দর্শকদের কাছে প্রিয় হয়েছে। আমি নিজে তৃপ্ত হতে পেরেছি এমন নাটকের নাম বলা এই মুহুর্তে আমার জন্য অনেক কঠিন। আর আমি মনে করি, একজন অভিনয়শিলণ্পী যদি তার কোনো কাজ দেখে তৃপ্ত হয়ে যায়, তাহলে তার আর ভালো কাজ করা হয়ে উঠবে না। প্রকৃত একজন শিল্পী সব সময়ই অতৃপ্তির রোগে ভোগেন। আর এই অতৃপ্তিই তাকে আরো ভালো থেকে ভালো কাজ করার প্রেরণা দেয়। আমি আমার অভিনীত কোনো নাটক দেখার পর কেন জানি তৃপ্ত হতে পারি না। আর আমি চাইও না যে এত অল্প সময়েই আমি তৃপ্তির সন্ধান পাই। আমার মনে হয়, প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীরই উচিত তার নাটক দেখা। নিজের ভূলগুলো ধরার জন্যই নাটক দেখা দরকার। আমি নাটক দেখতে বসলেই ভূলগুলো বড় হয়ে দেখা দেয় আমার চোখে। এতে আমার উপকারই হয় বেশী। কারণ যেই ভূলগুলো একবার আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, পরবর্তীতে আর সেই ভূল আর করি না।